বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী ব্যুরো ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :
গত বছর জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার তৎকালীন একান্ত সচিব হারুনুর রশিদ বিশ্বাসের (যুগ্ম-সচিব) স্বাক্ষর জাল ছাড়াও উচ্চ আদালতের কাগজ জাল করে তুমুল আলোচনায় আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর গ্রামের এনামুল হকের ছেলে কেনাল আলী।
ওই সময় কেনাল শিবগঞ্জ সীমান্তের ফতেপুর নামক একটি গরুর খাটাল অনুমোদন না পেয়ে এসব জাল কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। এসব জাল কাগজপত্র বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনে জমা দিয়ে খাটাল দখল করে ভারতীয় গবাদিপশু থেকে চাঁদা তোলা শুরু করেন।
কেনালের এ অপকর্মের বিষয়টি জানাজানির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনকে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আরিফ আহমেদ খান স্বাক্ষরিত সেই আদেশ এক বছরেরও বেশি সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। বরং ওই সময় কিছু সময়ের জন্য কেনাল আত্মগোপন করেন। বন্ধ হয় ফতেপুর খাটাল। তবে কিছুদিন ফের এলাকায় ফিরে জোহরপুর খাটাল দখল করে গরু থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেন। আদালতের আদেশে জেলা প্রশাসন জোহরপুর খাটাল থেকেও কেনালকে উচ্ছেদ করেন।
বহুল আলোচিত এই কেনাল এখন শিবগঞ্জের মাসুদপুর ও রঘুনাথপুর নামের দুটি বিট খাটাল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভারতীয় গরু থেকে কোটি টাকা চাঁদা তুলছেন। ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন কেনাল আলীর পেছনে ঢাকার বড় কোনো সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ রয়েছে। তার প্রভাবেই তার এই অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজিতে কোনো ছেদ পড়েনি।
গরু ব্যবসায়ী হাসান আলী অভিযোগে বলেন, কেনাল আলী, তার সহযোগী রুবেল আলী ও জামায়াত নেতা আবদুল খালেক মিলে মাসুদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্ত খাটাল দুটি দখলে রেখেছে বিজিবিকে হাত করে। প্রতিজোড়া ভারতীয় গবাদিপশু থেকে কেনাল সিন্ডিকেট আদায় করছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা করে।
যদিও প্রতি গরুতে সরকারি রাজস্ব ৫০০ টাকা ও খাটাল ব্যবস্থাপনা ফি ১০০ টাকাসহ মোট ৬০০ টাকা নেয়ার কথা। বিপুল পরিমাণ এ চাঁদা দিতে গিয়ে গরু ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই দুটি খাটাল থেকে প্রতিদিন কোটি টাকা করে চাঁদা ওঠে। এ টাকার ভাগ কেনাল কুরিয়ার সার্ভিসে ঢাকায় তদবিরকারীদের কাছে পাঠাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত মনিরুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, রঘুনাথপুর খাটালটি গত জুনে তার নামে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেটি অবৈধভাবে দখল করে গরু প্রতি চাঁদা তুলছেন জামায়াত নেতা আবদুল খালেক, কেনাল আলী ও তার সহযোগীরা। তিনি দ্রুত খাটালটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শিবগঞ্জের উজিপুর গ্রামের লোকজন জানান, বছর দুয়েক আগেও কেনাল ও বাবা এনামুল ইটভাটার শ্রমিক ছিল। কেনাল এখন কোটি টাকার মালিক। গ্রামে পাঁচতলা বাড়ি বানাচ্ছেন। আলিশান জীবনযাপন করছেন এখন। কেনালের সহযোগী রুবেলও এ চাঁদাবাজি করে এখন তিনটি ট্রাকের মালিক।
কেনাল আলী চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গরু আনা ও ঘাট খরচসহ বিভিন্ন খাতের জন্য এ টাকা নেয়া হয়। তার নিজের নামে খাটাল না থাকলেও তিনি শুধু পার্টনার হিসেবে ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন। অবৈধ দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
সীমান্তের খাটাল দখল করে কেনাল সিন্ডিকেটের অব্যাহত চাঁদাবাজি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে গত কয়েকদিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে বুধবার সকালে বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়। একটি মেইল দিয়েও বক্তব্য দিতে অনুরোধ করা হয় তাকে কিন্তু পরে তাতে সাড়া মেলেনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত শাখা-২ এর সিনিয়র সহকারী সচিব শফিউল করিম জানান, মন্ত্রণালয়ের জাল কাগজ তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে সেটার সর্বশেষ কী হয়েছে, এটা তিনি জানেন না। কারণ তিনি দায়িত্বে নতুন এসেছেন।